বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা বলতেন, এটা তাদের দেশ, অন্যরা ভাড়াটিয়া, এখন তারা নিজেরাই দেশে থাকতে পারছেন না, র্যাবকে তারা রক্ষীবাহিনীতে রুপান্তরিত করেছিল, আদালতকে কুক্ষিগত করা হয়েছে, তাদের কাছে কেউ নিরাপদ নয়। সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু বলতে কিছুই নেই, আমরা সবাই মানুষ। মানুষ হিসেবে আমাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিগত দিনগুলোতে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। প্রতিশোধ নিতে হলে আমাদেরই নেয়ার কথা, কিন্তু আমরা প্রতিশোধ নেইনি, নিবও না। পথ পরিবর্তনের পর আমরা মন্দির পাহাড়া দিয়েছি, বারবার হিন্দু ধর্মের নেতাদের সাথে বৈঠক করেছি। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল করেছে আমাদের বিচারের জন্য এখন তাদেরকেই এ আদালতে উঠতে হবে।’
শনিবার সকাল ৯টার দিকে হবিগঞ্জ পৌলসভা মাঠে জামায়াতে ইসলামী হবিগঞ্জ জেলা শাখার আমির মাস্টার আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি কাজী মহসিন আহমেদের পরিচালনায় অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে সোনা মানিক আখ্যা দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘সোনা মানিক ভারতে পালাতে গিয়ে সিলেটের সীমান্তে ধরা পড়েছে, ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকাও না কি তার কাছে পাওয়া গেছে, এভাবেই তারা ধরা পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তারা জাতীয় সম্পদ, জাতীয় বীর। তাদের আত্বত্যাগের কারণে দেশ একটি জুলুমবাজ সরকারের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে ঘৃণিত সেনা প্রধান মঈন ইউ আহমেদ জোরেবলে দুই বছর ক্ষমতা দখল করে রাখে। তাদের দুর্নীতির কাছে হিমালয়ের পর্বতও লজ্জা পেয়েছে। এক পর্যায়ে তারা দুই নেত্রীকে প্রস্তাব দেয়-আমরা নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা ছাড়তে চাই, তবে শর্ত হচ্ছে-আমাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা যাবে না। এক নেত্রী বললেন, এখনই তা বলা যাবে না, দোষ করে থাকলে বিচার হবে, আরেক নেত্রী বললেন, আমাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেন, আমরা আপনাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করব না। অবৈধ চুক্তি মোতাবেক শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন শুরু করেন। ১৫ বছরে জামায়াতের সাবেক দুই আমিরসহ কেন্দ্রীয় ১১ জন নেতাকে জুডিসিয়াল কিলিং-এর মাধ্যমে হত্যা করে। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে, পাঁচজনকে জেলে ভেতরে রেখে এবং একজনকে জেলের বাহিরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাসী, গুম খুন, লুটপাট, মেয়েদের ইজ্জত লুন্টনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দেশের মানুষের ওপর, ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর এতোটাই নির্যাতন করেছে যে, বিচারের ভয়ে তারা পালাতে গিয়ে এখন খালে বিলে ধরা পড়ছে।’
জামায়াত আমির আরো বলেন, ‘এক স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, নতুন রুপে অন্য স্বৈরাচার যাতে ক্ষমতা দখল করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে ডা. শফিকুর রহমান আল্লাহর কাছে দ্বীনের জন্য, দেশের জন্য শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের সম্মানের কথা তুলে ধরলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
পরে জামায়াত আমির হবিগঞ্জে ছাত্র-আন্দোলনে নিহত ১৫ জনের মধ্যে ১৪ জনের পরিবারকে ১ লাখ টাকা প্রদান করেন। এর মধ্যে একজনের পরিবারকে আগেই সিলেটে অনুদান প্রদান করা হয়েছিল। এ সময় তিনি মঞ্চ থেকে নেমে শহীদ পরিবারের সদস্যদের কাছে যান এবং অনুদান প্রদান করেন এবং ছবি তুলতে নিষেধ করেন।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. শফিকুর রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যন্ত স্বচ্ছ, তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতা আকড়ে রাখবেন না, যথা সময়ে নির্বাচন দেবে, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে নির্বাহী আদেশে, আওয়ামী লীগের নির্বাহী আদেশই তো আমরা মানি না, অবৈধ কোনো সরকারের আদেশ বৈধ হতে পারে না। নিবন্ধনের বিষয়টি আদালতের রায়ের বিষয়, আমরা আইনগতভাবেই সেটা মোকাবেলা করবো।’
প্রকাশক ও সম্পাদক-আব্দুল আউয়াল।
Email-dailyprovaterkagoj@gmail.com